আপনি কি আপনার জমির এস এ খতিয়ান অনলাইনে যাচাই করতে চাচ্ছেন? এস এ খতিয়ান চেক করে জমির মালিকের নাম, মোট জমির পরিমাণ, দাগ নম্বর এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন।
এস এ খতিয়ান হলো সার্ভে খতিয়ানের একটি ধরণ। এটি যাচাই করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে। সেখানে জমির সঠিক ঠিকানা দিয়ে অনুসন্ধান করলেই খতিয়ানের বিস্তারিত তথ্য দেখতে পারবেন।
আপনার হাতের স্মার্টফোন ব্যবহার করে কীভাবে ঘরে বসেই এস এ খতিয়ান অনুসন্ধান করবেন, তা জানতে এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে শেষ অব্দি পড়ুন।
এই পোস্টের বিষয়বস্তু
এস এ খতিয়ান অনুসন্ধান
এস এ খতিয়ানের অনুসন্ধান করতে প্রথমেই land.gov.bd ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। সাইটের নিচের দিকে ‘ভূমি রেকর্ড ও ম্যাপ’ নামে একটি অপশন পাবেন, সেখানে ক্লিক করুন। এছাড়া সরাসরি dlrms.land.gov.bd ওয়েবসাইট ভিজিট করেও কাজটি করতে পারেন। ওয়েবসাইটে ঢোকার পর ‘সার্ভে খতিয়ান’ অপশনটি সিলেক্ট করুন।
এরপর আপনার জমির ঠিকানার তথ্য, অর্থাৎ বিভাগ, জেলা এবং উপজেলার নাম বাছাই করুন। এবার খতিয়ানের প্রকারভেদ থেকে এস এ নির্বাচন করুন। সবশেষে, আপনার মৌজার নামটি তালিকা থেকে খুঁজে বের করুন অথবা জেএল নম্বর লিখে সার্চ করুন। এরপর খতিয়ান নম্বরটি নির্দিষ্ট ঘরে লিখে ‘খুঁজুন’ বাটনে চাপ দিন।
আপনার যদি খতিয়ান নম্বর জানা না থাকে, তবে খতিয়ানের তালিকা থেকে মালিকের নাম দেখে খতিয়ানটি খুঁজে বের করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে, মালিকের নামের উপর ডাবল ক্লিক করতে হবে। এছাড়াও, ‘অধিকতর অনুসন্ধান’ অপশনে গিয়ে জমির দাগ নম্বর বা মালিকের নাম দিয়েও খতিয়ানটি সার্চ করতে পারবেন।
খতিয়ানটি খুঁজে পাওয়ার পর সেটির উপর ডাবল ক্লিক করলেই একটি নতুন পপ-আপ উইন্ডোতে খতিয়ানের সমস্ত তথ্য দেখতে পাবেন।
এস এ খতিয়ান যাচাই করার নিয়ম
অনলাইনে এস এ খতিয়ান যাচাই করার জন্য একটি স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ লাগবে। পাশাপাশি, যে জমির খতিয়ানটির তথ্য চেক করতে চান, তার ঠিকানা এবং খতিয়ান নম্বর, মালিকের নাম অথবা দাগ নম্বর জানা থাকতে হবে।
এই তথ্যগুলো সাথে থাকলে, নিচের সহজ তিনটি ধাপ অনুসরণ করে আপনি জমির খতিয়ানের সকল তথ্য যাচাই করতে পারবেন এবং প্রয়োজনে খতিয়ানের কপির জন্য আবেদনও করতে পারবেন।
ধাপ ১ — ভূমি রেকর্ড ও ম্যাপ ওয়েবসাইট ভিজিট
এস এ খতিয়ান যেহেতু একটি সার্ভে খতিয়ান, তাই এটি যাচাই করতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট land.gov.bd-এ প্রবেশ করতে হবে। ব্রাউজারে land.gov.bd লিখে এন্টার চাপুন এবং ওয়েবসাইটের নিচের দিকে থাকা ‘ভূমি রেকর্ড ও ম্যাপ’ সেকশনে ক্লিক করুন।
অথবা, সরাসরি https://dlrms.land.gov.bd এই লিংকে ভিজিট করতে পারেন বা লিংকটি কপি করে ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে পেস্ট করে এন্টার করতে পারেন। এতে আপনাকে সরাসরি খতিয়ান অনুসন্ধানের পেজে নিয়ে যাবে।
ধাপ ২ — প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর প্রথমেই ‘সার্ভে খতিয়ান’ অপশনটি সিলেক্ট করুন (সাধারণত এটি আগে থেকেই সিলেক্ট করা থাকে)। এরপর আপনার জমির ঠিকানা অনুযায়ী বিভাগ, জেলা ও উপজেলা/থানার নাম সিলেক্ট করুন।
পরবর্তী ধাপে, ‘খতিয়ানের ধরণ’ থেকে এস এ খতিয়ান নির্বাচন করুন। তারপর তালিকা থেকে আপনার মৌজাটি সিলেক্ট করুন। মৌজা খুঁজে পেতে সমস্যা হলে সরাসরি জেএল নম্বর দিয়েও খুঁজতে পারেন। এরপর, খতিয়ান নং লিখে খুঁজুন বাটনে ক্লিক করুন বা খতিয়ানের তালিকা থেকে খতিয়ান সিলেক্ট করুন।

যদি খতিয়ান নম্বর মনে না থাকে, ‘অধিকতর অনুসন্ধান’ বাটনে ক্লিক করে দাগ নম্বর বা মালিকের নাম ব্যবহার করেও খতিয়ান খুঁজে বের করতে পারবেন।
ধাপ ৩ — খতিয়ানের তথ্য যাচাই
সঠিক খতিয়ানটি খুঁজে পাওয়ার পর সেটির উপর ডাবল ক্লিক করুন। সাথে সাথেই একটি পপ-আপ উইন্ডোতে খতিয়ানের বিস্তারিত তথ্য দেখতে পাবেন। এখানে আপনার জমির মোট পরিমাণ, মালিকের নাম, দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বরসহ সকল দরকারি তথ্য একবারে দেখে নিতে পারবেন।

এই পদ্ধতিতে যেকোনো জমির এস এ খতিয়ানের তথ্য যাচাই করতে পারবেন। প্রয়োজন হলে এখান থেকেই অনলাইন কপি বা সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করতে পারবেন যা নিচে দেখানো হয়েছে।
এস এ খতিয়ান ডাউনলোড করার পদ্ধতি
এস এ খতিয়ানের কপি ডাউনলোড করতে চাইলে অনলাইন বা সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন সম্পন্ন করে ফি পেমেন্ট করার পর খতিয়ানটি সরাসরি আপনার ফোনে ডাউনলোড হবে না, বরং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে হবে। খতিয়ান আবেদনের পদ্ধতি নিম্নরূপ —
পূর্বের ধাপগুলো অনুসরণ করে খতিয়ানটি চেক করুন। খতিয়ান চেক করার পর নিচের দিকে ‘ঝুড়িতে রাখুন’ বাটনটি দেখতে পাবেন, সেখানে ক্লিক করুন। এরপর ওয়েবসাইটের উপরের ডানদিকে থাকা ঝুড়ি আইকনে ক্লিক করুন। এবার আপনি খতিয়ানের অনলাইন কপি নাকি সার্টিফায়েড কপি চান, সেটি সিলেক্ট করুন।
এরপর আপনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নির্বাচন করে ‘চেকআউট করুন’ বাটনে ক্লিক করুন। আপনাকে land.gov.bd ওয়েবসাইটে নিয়ে যাওয়া হবে। আপনার যদি আগে থেকেই অ্যাকাউন্ট থাকে তবে লগইন করুন, না থাকলে নতুন একটি অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করে নিন।
নিবন্ধনের জন্য আপনার ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য দিয়ে ফরমটি পূরণ করুন। এরপর মোবাইল ব্যাংকিং, ব্যাংক বা কার্ডের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করুন। পেমেন্ট সফল হলে আবেদনের একটি কপি ডাউনলোড করার সুযোগ পাবেন। এই কপিটি প্রিন্ট করে নিন।
আবেদনের কপিতে উল্লিখিত তারিখে প্রিন্ট করা কপিটি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। সেখানে কপিটি জমা দিলেই এস এ খতিয়ানের কপি হাতে পেয়ে যাবেন।
শেষ কথা
আশা করি, এই পোস্টে দেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করে সহজেই এস এ খতিয়ান চেক করতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটে অন্যান্য খতিয়ান, যেমন বি এস খতিয়ান এবং আরএস খতিয়ান, যাচাই করার পদ্ধতি নিয়েও পোস্ট রয়েছে। আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচের FAQ সেকশনটি দেখতে পারেন অথবা কমেন্টে প্রশ্ন করতে পারেন।
FAQ
এস এ খতিয়ান বলতে কী বোঝায়?
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন অনুসারে যে ভূমি জরিপ পরিচালিত হয়, তার ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত জমির রেকর্ড বা দলিলকেই এস এ খতিয়ান বলা হয়।
এস এ জরিপ কোন সময়ে পরিচালিত হয়েছিল?
এই জরিপটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে, ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যে পরিচালনা করা হয়েছিল।




